Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
ডিজিটাল বাংলাদেশ
বিস্তারিত

 


সূচনা: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে। একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণই ছিল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান বিষয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা: ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করে যে ‘২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে।
একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি—সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্তুত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করবে। ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ ১৭ থেকে ১২ নভেম্বর ২০০৯-এ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ নামক এ বিষয়ে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা: বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে একটি উন্নত, বিজ্ঞানমনস্ক সমৃদ্ধি বাংলাদেশকে বোঝায়।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, যা প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি।’
এটি বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অধিকার। এটি হচ্ছে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পথিকৃৎ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথিকৃৎ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা, তিনি পথিকৃৎ হিসেবে লক্ষ অর্জনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাতীয় অগ্রাধিকার: ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম জাতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করা।
এ জন্য জাতীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অগ্রাধিকার থাকতে হবে। সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। প্রতিটি ঘরকে তার বা বেতার-পদ্ধতিতে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক-ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে। দেশের সব অঞ্চলের জনগণকে ডিজিটাল যন্ত্রে সজ্জিত করাসহ ডিজিটাল ডিভাইস প্রণয়ন করা জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া আরও যেসব বিষয় অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে তা হলো: জনগণের নিজস্ব সংযুক্তি, জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযুক্তি, সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি, কৃষি, শিল্প ও ব্যবসার রূপান্তর।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য: ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ১. প্রধান লক্ষ্য ২. রাজনৈতিক লক্ষ্য।
১. প্রধান লক্ষ্য: ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্তরে স্তরে এর অনুন্নত জীবনধারাকে বদলে বাংলাদেশের সমাজকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা।
কার্যত এ দেশের মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা এবং জনগণের সরকারসহ সব স্তরের সব কাজকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা।
২. রাজনৈতিক লক্ষ্য: ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কিছু রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে। নিচে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
ক) জনগণের রাষ্ট্র: ‘ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে জনগণের উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন, মৌলিক মানবিক অধিকার সংরক্ষণ, সব সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা থাকবে। এই রাষ্ট্রের জনগণের কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সুলভ করা হবে।
খ) মৌলিক চাহিদা রাষ্ট্রকেই পূরণ করতে হবে: রাষ্ট্রকে জনগণের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। জনগণ যাতে করে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়, তার জন্য তাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাতে হবে এবং সেই প্রযুক্তি তার কাছে রাষ্ট্রকেই সহজলভ্য করতে হবে। ‘দরিদ্র জনগণকে জ্ঞানকর্মী বা ডিজিটাল প্রযুক্তিকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং গ্রামে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্প-বাণিজ্যসহ কৃষি, শিক্ষা, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।’
গ) রাজনৈতিক ধারা: ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো সরকার, জাতীয় সংসদসহ সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালনা করা, যাতে জনগণ সব সময়ই সংসদ, সরকার ও রাজনীতিতে ইন্টার অ্যাকটিভ পদ্ধতিতে অংশ নিতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সরকারের কাজ করার পদ্ধতি ডিজিটাল করা, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো, ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর, যোগাযোগব্যবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচলন করা, তথ্যের অবাধ চলাচলের জন্য ডিজিটাল-ব্যবস্থা গ্রহণ।
অগ্রগতি: ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার প্রথম বছরে দৃঢ়তার সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে এর ভিত্তি বা প্রথম সোপান। 
সরকার আইসিটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে, সেটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ, ই-কমার্স চালু করা, নতুন নতুন প্রযুক্তির লাইসেন্স প্রদান করা, সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা।
কিছু প্রত্যাশা: তারহীন উচ্চগতির ইন্টারনেট ওয়াইম্যাক্স সহজলভ্য হোক এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক—এই সবার প্রত্যাশা। ‘আশা করি, বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল নেটওয়ার্কের কাজ সরকার তাড়াতাড়ি চালু করবে।’
‘বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা যদি গ্রামের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করতে পারি, তাহলেই বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশবিষয়ক সতর্কতা: বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে এর প্রভাব হিসেবে ডিজিটাল ডিভাইজ সম্প্রসারিত হতে পারে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধাভোগী শোষকগোষ্ঠী, ধনী বা বিশেষ সম্প্রদায়, শ্রেণী-গোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়ক হতে পারে। কিন্তু জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানহীন হওয়ায় সুযোগহীন মানুষের জীবনযাপন আরও কষ্টকর হতে পারে।
উপসংহার: ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে অর্থ ও শারীরিক শক্তির বদলে মেধা ও জ্ঞানের শক্তির প্রাধান্য থাকবে। কৃষিভিত্তিক একটি সমাজ থেকে বাংলাদেশ একটি সৃজনশীল ও মেধাভিত্তিক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়ে মানবসভ্যতার ডিজিটাল যুগে নেতৃত্ব দেবে। আর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকার ও জনগণকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
রবন্ধ রচনা
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প 
ভূমিকা: পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানি বাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বেকার সমস্যা সমাধান, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ শিল্পের অবদান উৎসাহজনক।
পোশাকশিল্পের অবস্থা: ১৯৭৭ সালে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এ দেশে পোশাকশিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে পোশাকশিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ শুরু হয়। তখন ১২৫টি পোশাক তৈরির কারখানা নিয়ে এ শিল্পের যাত্রা। বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা, দেশীয় উদ্যোগের সক্রিয় ভূমিকার ফলে বর্তমানে কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯০০টিতে। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ নারী-পুরুষ পোশাকশিল্পে কর্মরত। এর ৮৫ শতাংশ নারী। এর মধ্যে অর্ধশিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত লোকের সংখ্যাই বেশি। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প জাতীয় আয়ের ৬৪ শতাংশ সরবরাহ করছে। ১৯৯৫ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ১৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ১০০ শতাংশই রপ্তানিমুখী। বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। সুতরাং এ খাত যে বিপুল সম্ভাবনাময়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পোশাকশিল্পের বাজার: বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই ইউরোপ ও কানাডা। বিশ্বের ৩০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি বেলজিয়াম ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের বেশ কদর রয়েছে। ফলে এর বাজার যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাকশিল্প বিরাট অবদান রাখবে এবং দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্প সুদূরপ্রসারী অবদান রেখে চলেছে। এ খাতের অবদানের প্রধান দিকগুলো নিচে দেওয়া হলো:
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধি: পোশাকশিল্প বিকশিত হওয়ার ফলে দেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের প্রায় ১০০টি বায়িং হাউস পোশাকসামগ্রী কেনাবেচায় নিয়োজিত। জাতীয় আয়ের প্রায় ৬৪ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। তবে এই আয় নির্ভর করে রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর।
বেকার সমস্যা সমাধান: এ খাতে বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি নারীশ্রমিকের কর্মসংস্থান সম্ভব হওয়ায় জাতীয় জীবনে বেকারত্ব হ্রাসে ও স্বাবলম্বী জীবনব্যবস্থায় এ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 
দ্রুত শিল্পায়ন: দ্রুত শিল্পায়নে পোশাকশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এর ফলে দেশ্নে স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং, প্রিন্টিং ইত্যাদি শিল্প গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া জিপার, বোতাম ইত্যাদি শিল্পেরও প্রসার ঘটছে।
পোশাকশিল্পের সমস্যা: ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) প্রবর্তিত Agreement on textile and clothing ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। বিলুপ্ত হয়েছে Multifibre Arrangement (MFA) চুক্তি। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ কম খরচে গুণগত মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। 
এই পিছিয়ে থাকার মূলে বহুবিধ সমস্যা বিদ্যমান। যেমন: 
১. Backword and Forward Linkage শিল্পের অভাব। 
২. সুতা উৎপাদনের অপর্যাপ্ততা। বাংলাদেশে এখন ১৪২টি রিং স্পিনিং মিল ও ১৫টি ওপেন অ্যান্ড স্পিনিং মিলসহ এক হাজার ১২৬টি বয়ন ও স্পিনিং কারখানা আছে। এগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য উৎপাদন করে। 
৩. বৈদেশিক বিনিয়োগের স্বল্পতা।
৪. পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের শিক্ষার অভাব। 
৫. শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব।
৬. উন্নত প্রযুক্তির অভাব। 
৭. অনুন্নত অবকাঠামো।
৮. বন্দর-সমস্যা।
৯. ব্যাংকের সুদের হার অনেক বেশি।
১০. ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা। 
১১. পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব। 
১২. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
১৩. কাস্টমস হয়রানি।
১৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। 
১৫. বাজারজাতকরণ ত্রুটি।
১৬. পরিবহনের সমস্যা রয়েছে।
সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ: পোশাকশিল্পের উন্নয়নে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা তথা বাণিজ্যিক সুবিধা। অন্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. Backword and Forward Linkage শিল্প স্থাপন। 
২. আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন।
৩. প্রযুক্তির উন্নয়ন। 
৪. উৎপাদিত পোশাকের গুণগত মান বজায় রাখা। 
৫. উৎপাদিত ব্যয় কমানোর জন্য উন্নত কাঁচামাল সরবরাহ।
৬. শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানো।
৭. বন্দরব্যবস্থার উন্নয়ন। 
৮. রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
৯. অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার।
১০. নিজস্ব ফ্যাশন ও ডিজাইনকে উন্নত করতে হবে। 
পোশাকশিল্পের সম্ভাবনা: বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায়। তবে বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আইএসও সনদ গ্রহণ করতে হবে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের বস্ত্র ও পোশাকের মানোন্নয়ন, মূল্যহ্রাস করে চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সরকার, উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। 
উপসংহার: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি পোশাকশিল্পের ভূমিকা অনন্য। তাই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার।